দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন আর উন্নয়নের ধারাকে বেগবান করতে সরকারি উদ্যোগে উপজেলার সরকারি দপ্তরে বিভিন্ন দিবস উদযাপন করা হয়। আর এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনাসভা ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা। সেইসাথে সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের উৎসাহী করতে থাকছে নানান প্রণোদনা। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে র্যালির আয়োজন করা হচ্ছে সেইসব র্যালি এখন উপজেলা চত্বরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন দিবস উদযাপনের কর্মসূচির র্যালি এখন অনেকটাই লোক দেখানো র্যালিতে পরিণত হয়েছে। দিবস উদযাপনের কর্মসূচি শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনেক প্রতিবেদনে র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেছে মর্মে উল্লেখ থাকলেও আদতে এসব র্যালি উপজেলা চত্বরের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খুশি করতে বা নিয়মরক্ষার র্যালি করতে উপজেলা চত্বরের প্রধান ফটকের সামনে র্যালির ভিডিও ও কয়েকটি ছবি তুলে সেখানেই র্যালির ব্যানার গুটিয়ে নেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। পরে সেই ভিডিও বা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দায়সারা দিবস উদযাপন করা হয়। এতে করে এলাকার অধিকাংশ মানুষই জনসচেতনতামূলক এসব কর্মসূচির মর্মকথা জানতে পারেন না। এছাড়া গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী প্রান্তিক পর্যায়ের সুবিধাভোগীরা বিভিন্ন সরকারি দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানা থেকে প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছেন।
চলতি বছরের ২৮ জুলাই উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত সমাজকর্মী দিবস ২০২২ উপলক্ষে ২০ জনকে নিয়ে একটি র্যালি উপজেলা পরিষদ ভবন চত্বরে শুরু হয়ে সেখানেই শেষ হয়।
গত ২৪ জুলাই উপজেলা মৎস্য দপ্তর কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষ্যে একটি র্যালিটি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়।
গত ২৬ জুন উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ও ২২ মে উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস কর্তৃক আয়োজিত ভূমি সেবা সপ্তাহ, ৮ মে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব মা দিবসের র্যালি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়।
উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত গত ৬ এপ্রিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবসের র্যালি উপজেলা চত্বরে হয়।
গত ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস, ২ মার্চ উপজেলা নির্বাচন অফিস কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় ভোটার দিবস এবং ৮ মার্চ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ এর র্যালি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়।
গত বছরের ৬ অক্টোবর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত জন্ম ও মৃত্যু দিবস ২০২১, ২৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসের র্যালি উপজেলা চত্বরে শুরু হয়ে সেখানেই শেষ হয়।
এতো গেলো উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলার পরিষদ চত্বরে সরকারি দপ্তরের র্যালির কথা। উপজেলার যে দপ্তর থেকে এলাকার সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা পাওয়ার কথা- সেটি হলেঅ উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন সচেতনতামূলক দিবসের র্যালি এখন আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক পার হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শতে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম স্যার এখানে দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন দিবসের র্যালি শহরের রাস্তায় প্রদক্ষিণ করতো। কিন্তু এখন আর তা হয় না।
চলতি বছরের ২১ জুলাই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের র্যালি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চত্বরে শুরু হয়ে ১০ হাত সামনে এগিয়ে আবার সেখানেই শেষ হয়। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস, ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ও ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষা দিবসের র্যালিও চত্বরেই শুরু ও শেষ হয়।
অফিস চত্বরে এমন র্যালির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন বলেন, মৎস্য সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে র্যালি, আলোচনা সভা, মৎস্যজীবীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক করা হয়েছে। তবে র্যালি উপজেলা থেকে শুরু হয়ে কলেজ বাজার পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করার কথা থাকলেও র্যালি শুরু হওয়ার পরপরই বৃষ্টি শুরু হলে সেই র্যালি আর সামনে নেয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে সরকার বিভিন্ন দিবস ঘোষণা করেছে। আর এসব দিবসে কর্মসূচির অংশ হিসেবে র্যালির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও সম্পৃক্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু অনেক সরকারি দপ্তরের দায়সারা কর্মসূচির কারণে সরকারের গৃহীত বার্তা সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছায় না বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচিতে দিবস সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের অংশগ্রহণে র্যালি ও আলোচনা সভা করা হয়ে থাকে। তবে বিরামপুর শহরের প্রধান সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় জননিরাপত্তার কথা ভেবে র্যালি নিয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলা হবে। যদি পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় তাহলে আগামীতে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন দিবসের র্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের উদ্যোগ নেয়া হবে।