মাতৃভূমি আর মনের মানুষদের ছেড়ে জীবিকার তাড়নায় বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি জমান বহু বাংলাদেশি শ্রমিক। সেখানে নিজের জীবন পিষে পিষে অর্থ রোজগাড় করে পাঠিয়ে দেন দেশে, স্বজনদের কাছে। প্রবাসীর কষ্টার্জিত সেই টাকায় বাড়ে রেমিটেন্স, বেগবান হয় দেশের উন্নয়ন।
প্রবাসী শ্রমিকরা তাদের জীবনটাই যেন বিলিয়ে দেন দেশে থাকা স্বজনদের তথা দেশের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য। প্রবাসে কাজ করতে গিয়ে প্রায় সময়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অনেক প্রবাসী। হরহামেশাই এমন খবর চোখে পড়ে পত্রিকার পাতায়।
শুধু ২০২২ সালেই এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার পথে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ হতভাগ্য বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আফ্রিকার বন-জঙ্গলঘেরা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় এমনই দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় শোকের মাতম উঠেছে মৃত্যুবরণকারী হতভাগ্য দুই তরুণের স্বজনদের মাঝে। দেশটিতে কাজ করতে যাওয়ার পর মাস না পেরোতেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে বাংলাদেশের তরতাজা দুই তরুণকে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সময়ের বহু আগেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হয়েছে তাদের।
মৃত্যুবরণকারী দুই শ্রমিকের মধ্যে একজনের নাম আমজাদ খান। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে। হতভাগ্য আরেকজনের নাম হাবিবুর রহমান তপু। তার দেশের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষকামতা গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আনার উল্লাহ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখার আগেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন তপু ও আমজাদ। আফ্রিকার জঙ্গলঘেরা পথ পাড়ি দেওয়ার সময় মশার কামড় থেকে ম্যালেরিয়া বাসা বাঁধে তাদের শরীরে। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ঠিকই তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছান, কিন্তু স্বপ্নপূরণের আগেই দুঃস্বপ্ন হানা দিয়েছে তাদের জীবনে। ম্যালেরিয়া কেড়ে নিয়েছে দুই তরুণের মূল্যবান প্রান।
অসুস্থ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানোর পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তপু ও আমজাদকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আত্মীয়-স্বজনহীন সম্পূর্ণ অচেনা জায়গায় অচেনা মানুষের কাছে তারা কতটা পরিচর্যা পেয়েছেন তা শুধু তারাই জানেন। শেষতক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে তাদের দুজনকেই।
