আমাদের যাদের জন্ম ৭০ দশকে বিশেষ করে যুদ্ধের পর তারা অনেক ভাগ্যবান। তারা অনেক অনেক বিবর্তনের সাক্ষী। আমরা ভাগ্যবান কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাইনি।
আমরা দেখেছি সাদা কালো টিভি, দিনে তিনটায় খুলত আর রাত বারোটায় বন্ধ হতো। সাদা কালো টিভি থেকে রঙ্গিন টিভি, বেলা তিনটা থেকে শুরু হওয়া টিভি থেকে সারা দিনরাত খোলা টিভি। একটা নির্দিষ্ট চ্যানেল থেকে শ শ চ্যানেল।
আমরা সাক্ষী প্যাডেল দিয়ে ঘুরানো টেলিফোন থেকে কর্ডলেস ফোন। আমার বড় আপা ঢাকায় থাকত। নোয়াখালী থেকে এনডব্লিউডি কল করার জন্য আমি, আমার বোন, এবং আম্মা মিলে ঘণ্টা দুই তিনেক চেষ্টার পর সেই কাঙ্ক্ষিত ফোনে আপাকে পেতাম। নম্বর ঘুরাতে ঘুরাতে তিন জনের আঙ্গুল ব্যথা হয়ে যেত।
তারওয়ালা প্যাডেল ফোন থেকে তার বিহীন, নিজের সাথে বহন যোগ্য, নম্বর ঘুরানো ছাড়া নোয়াখালী থেকে ঢাকা নয় সারা বিশ্বের যেকোন প্রান্তে নিমিষেই কথা বলার জন্য মোবাইল, অনন্য ঘটনার সাক্ষী আমরা।
আমরা সাক্ষী হাতের লেখা চিঠির পরিবর্তে ইমেইল এবং খুদে বার্তার। একদিনের ভিতর চিঠি যাতে পায় সেজন্য কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করাও দেখলাম। বিদেশ থেকে চিঠি প্রায় মিসিং হতো সেখানে চেক থাকবে এই আশায়। তারও বিবর্তন দেখলাম অনলাইন ট্রান্সফার এবং আরো অনেক সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে।
ভিসিআর, ডিভিডি, ভিসিডি, এমপি থ্রি, এই রকম কত কিছু আসল গেল। সব কিছুর জায়গা দখল করে নিল ইন্টারনেট আর মোবাইল।
সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন নিয়ে আসল মনে হয় মোবাইল, আর ইন্টারনেট। দুনিয়াটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসল।
কম্পিউটার ৬০ দশকে আবিষ্কার হলেও এর গতি নিয়ে এসেছে ইন্টারনেট। একটা সময় মাঝ বয়সীরা কম্পিউটারে কাজ করায় অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও ধীরে ধীরে এর যে কোন বিকল্প নেই তা বুঝতে পেরেছে।
যারা বিংশ শতাব্দীর তারা তেমন কিছু বুঝবে না। তাদের কাছেতো ১০ মিনিট ইন্টারনেট না থাকলে সব কিছু অন্ধকার মনে হয়। আমরা কালের সাক্ষী।
সময়ের সাথে এগুতে হলে আমাদেরকে প্রযুক্তির সাথেই চলতে হবে। নিজেকে যত তাড়াতাড়ি এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারব ততই মঙ্গল। এই প্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোন প্রান্তের কাজ করতে পারছি। সত্যি অভাবনীয়।