26 C
Dhaka

ফকির লালনের দেহতাত্ত্বিক সাধনা : কামশ‌ক্তি ঊর্ধ্বগামী করে আধ্যাত্মিক শক্তিতে রূপান্তরের গুপ্ততত্ত্ব

প্রকাশিত:

নির্দ্বিধায় বাংলার মুকুটবিহীন বাউল সম্রাট বলা যায় ফকির লালন শাহকে। বাংলা লোক সংগীতের শাহেনশাহ হিসেবেও বিবেচিত তিনি। তার র‌চিত অসাধারণ বাণী ও হৃদয়স্পর্শী সুরসমৃদ্ধ অনেক গান কালীক সীমারেখা অ‌তিক্রম করে আজও চর্চিত একটি বিষয়। রীতিমতো গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে লালনের অমূল্য কথা ও সুরের বহু গান। বিশেষ করে দেহতত্ত্বের অনেক গানকে তিনি এক অদ্ভুত শৈল্পিক মায়াজালে বেঁধেছেন। লালনের ছোঁয়ায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মাত্রা পেয়েছে গানগুলো।

এই বাংলার মা‌টিতে চ‌র্চিত এক‌টি ধর্মমত বাউল। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প‌শ্চিমবঙ্গেও বাউলদের বিস্তৃ‌তি দেখা যায়। বাউল গান বাউল সম্প্রদায়ের সাধনসংগীত। গানে গানে মানবতার বাণী প্রচার করেন তারা। গানের মধ্য দিয়ে তারা প্রকাশ করেন তাদের মত ও দর্শন। হৃদয়স্পর্শী সুর আর জীবন দর্শন সমৃদ্ধ বাণীর এসব গান বাংলা লোকসংগীত‌কে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করেছে। উদার ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মসাধনা করেন বাউলরা। বাউল ধর্মমতে বৈষ্ণব ধর্ম এবং সুফীবাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বাউল‌ সম্প্রদায়ে গৃহী ও সন্ন্যাসী দুই ধরনের বাউলই আছেন। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো আত্মা। বাউলরা বিশ্বাস করেন, পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তাকে জানার উপায় হলো আত্মাকে জানা। আর এই আত্মার বসবাস যেহেতু দেহে তাই দেহকে অত্যন্ত পবিত্র জ্ঞান ক‌রার তা‌গিদ দেন বাউলরা।

বাউলরা নি‌র্দিষ্ট কোনো ধর্ম পালন না করে মানবধর্ম পালন করেন। তারা নিজেদের বিশ্বমানব বলে মনে করেন। তারা অহিংস নী‌তি অনুসরণ করেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের মাঝে ভালোবাসা ও শা‌ন্তির বার্তা ছ‌ড়িয়ে দিতে চান বাউলরা। এজন্য জাতিসংঘ বাউল সম্প্রদায়কে শান্তিপ্রিয় মানব সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাউল মতের সূচনা সতেরো শতকে হলেও মূলত লালন শাহের গানের মধ্য দিয়েই বাউল মত ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। তার গানের মধ্য দি‌য়ে উনবিংশ শতাব্দী থেকে বাউল গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। তার মতো আর কেউই এত বিপুল প‌রিসরে বাউল গানকে জন‌প্রিয় করতে পারেন‌নি। এজন্য বাউলকূল শিরোমণি বলা হয় লালনকে। বাউল সম্রাট হিসেবেও বিবে‌চিত বাউল সাধকদের শিরোমণি ফ‌কির লালন শাহ। জীবদ্দশায় তি‌নি ঠিক কতগুলো গান রচনা করেছেন সে বিষয়ে সু‌নি‌র্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, তার র‌চিত গানের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি।

লালনের দেহতত্ত্ব মতে, মানবদেহের মাঝেই লুকা‌য়িত আছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সকল রহস্য। তার কথায়, “যা আছে ভান্ডে, তা আছে ব্রহ্মান্ডে”। মহাবিশ্বের সবকিছুই অন্ত‌র্নিহিত আ‌ছে মানবদেহের মধ্যে।বছর, মাস, দিন, তিথিক্ষণ থেকে শুরু করে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, নদ, নদী সবই আছে দেহের ভেতর। বিশ্বব্রহ্মান্ডে বিপুল প্রবাহের মধ্যে যে সত্য ছ‌ড়িয়ে আছে, দেহের ভেতর জৈ‌বিক প্রবাহের মধ্যেও সেই একই সত্য সদা বিচরণশীল। সব তত্ত্বেরই বাহন হলো দেহ‌। দেহের ভেতরেই আত্মার বসবাস। তাই সব তত্ত্বকথা এই দেহকে ঘিরেই।

ফকির লালন শাহ দেহকেন্দ্রিক সাধনার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাউলরা দেহকেন্দ্রিক সাধনা করেন কামকে প্রেমে রূপান্তর করার জন্য। প্রতি‌টি মানুষের ভেতর অপরূপ এক জগৎ রচনা করে দিয়েছেন ঈশ্বর। লালনের বাণী অনুযায়ী, প‌রম গোপন সেই জগতে বাস করে একজন মনের মানুষ। লালন তাকে কখনো “অচীন পাখি” আবার কখনো “আরশি নগরের পড়শী” বলে‌ উল্লেখ করেছেন। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অধর সেই সত্ত্বার সন্ধান পেতে দেহতাত্ত্বিক সাধনায় মগ্ন হন বাউলরা।

র‌তি বা রক্তনির্যাস হলো মানবদেহের সারবস্তু। রতিক্ষয় মানুষের দেহ ও মনকে অস্থির করে তোলে। তাই কামের ফাঁদে না পড়ে র‌তি সাধনার মাধ্যমে র‌তি‌পাত রোধ করে শান্ত বা স্থিরাবস্থায় পৌঁছানোর চেষ্টায় লিপ্ত হন বাউলরা। ফ‌কির লালনের বাণী অনুযায়ী, “পলক ভোরে বিষ ধেয়ে ওঠে ব্রহ্ম অন্ডলে, যেজন জানে উল্টা মন্ত্র খাটিয়ে সেই তন্ত্র, গুরু রূপে করে নজর ও বিষ ধরে সাধন করে, ভয় পেয়ে জন্মাবধি সে পথে না যাও যদি, হবে না সাধন সিদ্ধি।”

আক্ষরিক অর্থে র‌তি বলতে মৈথুন, যৌনসঙ্গম, যৌনকর্ম কিংবা স্ত্রী সহবাসকে বোঝায়। আর যে সাধনায় র‌তিপাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন ক‌রা যায় তাকেই র‌তি সাধনা বলে।

সাধকদের মতে, র‌তি সাধনায় র‌তিশক্তি বা‌ড়িয়ে র‌তিক্ষয় রোধ করা যায়। শুধু তাই নয়, এ‌ই সাধনায় আধ্যাত্মিক শ‌ক্তিও অর্জন করা সম্ভব। দম সাধনার মাধ্যমে এই সাধনা করা হয়। দম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মন ও র‌তিপাত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কারণ মনের সাথে র‌তিপাতের ঘ‌নিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। যে কোনো সাধনায় সি‌দ্ধি লাভের জন্য স্থির বা শান্ত ম‌ন এবং মনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। র‌তি সাধনার একটা পর্যায়ে গিয়ে র‌তিপাত করা বা না করা পুরোপু‌রি নিজের আয়ত্বে চলে আসে। অবশ্য সাধনার এই স্তরে পৌঁছানো মোটেও সহজ কর্ম নয়।

বিজ্ঞানের ভাষায়, মানুষের মেরুদণ্ডের কশেরুকার ভেতর দিয়ে তিনটি স্নায়ু বা রগ বা না‌ড়ি সাপের মতো কুণ্ড‌লি পা‌কি‌য়ে বা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ম‌স্তিষ্কের দিকে ধা‌বিত হয়েছে। স্নায়ু তিন‌টি হলো ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না। সঞ্চারণমান প্রাণবায়ু ইড়া ও পিঙ্গলার মধ্য দিয়ে চক্রাকারে সবসময় আবর্তিত হয়। অন্যদি‌কে সুষুম্নাকাণ্ড বা মেরুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড হলো দীর্ঘ, সরু ও নলাকার স্নায়ুগুচ্ছ যা মস্তিষ্ককে দেহের অন্যান্য স্নায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত করে। আর যেসব স্নায়ু সুষুম্নাকাণ্ড থেকে বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে যায় কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে সুষুম্নাকাণ্ডে প্রবেশ করে সেগুলো হলো সুষুম্না বা মেরু স্নায়ু। বি‌ভিন্ন সংবেদী স্নায়ু শরীরের নানা অংশ থেকে স্পর্শ, তাপসহ বি‌ভিন্ন অনুভূ‌তি বহন করে সুষুম্নাকাণ্ডে পৌঁছে দেয়। আবার সুষুম্নাকাণ্ড তা পৌঁছে দেয় মস্তিষ্কে। মেরুস্নায়ুর পশ্চাৎমূলকে বলা হয় পশ্চাৎমূলীয় স্নায়ুসন্ধি।

ইড়া বাম শুক্রাশয় থেকে নাকের ডান ছিদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এ‌র রং সাদা। এটি শান্ত ও সুন্দর। একে চাঁদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। অন্যদিকে পিঙ্গলা ডান শুক্রাশয় থেকে নাকের বাম ছিদ্র পর্যন্ত কিস্তৃত। এর রং লাল। এ‌টি ভয়ংকর রকমের শক্তিশালী। একে সূর্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর সুষুম্নার অগ্রভাগ থেকে পশ্চাৎভাগ পর্যন্ত পুরোটাজুড়ে কুলকুণ্ডলিনীর বিভিন্ন স্তরে সাধনার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন চৈতন্য জাগ্রত করার মাধ্যমে শেষ অব‌ধি ঈশ্বরের সঙ্গে লীন হওয়ার উদ্দেশ্যে ‌নিরলসভাবে চরম ক‌ঠিন এক সাধনা চা‌লিয়ে যান জগতের সকল সফল সাধক।

ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্নার মতো প্রধান প্রধান না‌ড়ির উৎপত্তিস্থলকে কুন্দস্থান বলা হয়। সাধকদের ভাষ্যমতে, কুন্দস্থানে ঘু‌মন্ত সাপের মতো বিরাজমান কুলকুণ্ডলিনী হলো সকল শক্তির আধার।এ‌টি কিন্তু শরীরের কোনো অংশ নয়। বস্তুগতভাবে এর কোনো অস্তিত্বও নেই। বিশেষ এই শক্তিকে আধ্যাত্মিক শক্তি হিসেবে মানা হয়। সাধকরা কুণ্ডলী যোগ প্রক্রিয়ায় কুণ্ডলিনী শক্তি জাগরণের মধ্য দি‌য়ে সিদ্ধি লাভের চেষ্টা করেন।

সাধকরা বলেন, কুণ্ডলিনীর প্রাণশক্তিকে সুষুম্নার ভেতর দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী করে মস্তিষ্কে পাঠানো যায়। চোখ বন্ধ করে চৈতন্যের মধ্য দিয়ে অনুভব করতে হয় কুণ্ডলিনীর অস্তিত্ব। ঘুমন্ত কুণ্ডলিনীকে জাগাবার চেষ্টার মধ্য দিয়ে সাধক ধ্যানের একটি বিশেষ স্তরে পৌঁছান। তি‌নি কুম্ভক যোগ প্রক্রিয়ায় দম রুদ্ধ করে বায়ুকে সজোড়ে মস্তিষ্কের দিকে চালিত করেন। যার কল্পনা শক্তি যত প্রবল তি‌নি তত দ্রুত কুণ্ডলিনী জাগ্রত করতে পারেন।

সাধকদের মতে, সুষুম্নার জ্যোতির্ময় ও প্রাণময় পথই হলো মুক্তির পথ। মুক্তির এই পথ দিয়ে কুণ্ডলিনীকে ঊর্ধ্বদিকে চালিত করতে হয়। প্রণয় চিন্তা কিংবা পাশবকার্য থেকে যে যৌনশক্তির উদ্ভব তাকে ঊর্ধ্বদিকে মানবদেহের মহাবিদ্যুৎ আধার মস্তিষ্কে পাঠাতে পারলে সেখানে সঞ্চিত হয়ে যৌনশক্তি আধ্যাত্মিক শক্তিতে রূপান্ত‌রিত হয়। শুধু মানবদেহেই এই শক্তি সঞ্চয় করা যায়।

যেসব সাধ‌ক যৌনশক্তিকে পুরোপু‌রি আধ্যাত্মিক শ‌ক্তিতে রূপান্তর করতে সমর্থ হন তারা সাধনায় প‌রিপূর্ণ সি‌দ্ধি লা‌ভ করতে পারেন। উন্নীত হতে পা‌রেন দেবতা কিংবা মহাপুরুষের পর্যায়ে। তাদের বাণীতে বিরাজ করে অ‌চিন্তনীয় শক্তি। শুধু তাদের কথাতেই নবজাগরণ ঘটতে পারে পুরো জগতে। মানবদেহের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি হলো যৌনশক্তি। যখন এই সৃ‌ষ্টিশ‌ক্তি আধ্যাত্মিক শক্তিতে রূপান্ত‌রিত হয় তখন একজন নারী বা পুরুষ আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে সমর্থ হন।

শক্তি সৃষ্টি করা যায় না। এর ধ্বংস বা বিনাশ নেই। তবে শক্তির রূপান্তর ঘটানো সম্ভব। শ‌ক্তিকে কা‌ঙ্ক্ষিত পথে প‌রিচালিত করা যায়। কাজেই মানুষের মধ্যে থাকা ভয়ংকর কাম শ‌ক্তিকে যোগ সাধনায় বশে আনতে হবে। অবিচল ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লা‌গিয়ে কাম শক্তিকে পাশব হতে না দিয়ে আধ্যাত্মিক শ‌ক্তিতে রূপান্তর করে প‌বিত্রতা অর্জন করতে হবে।বস্তুত সব ধর্ম ও নীতিরই ভিত্তি হলো পবিত্রতা। হিন্দু যোগদর্শনের রাজযোগ শাখায় ধ্যানের মাধ্যমে মনের সংযম ও নির্বাণ লাভের কথা বলা হয়েছে। এই রাজযোগেও পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা অতি আবশ্যক। একই নিয়ম প্রযোজ্য অবিবাহিত-বিবাহিত সবার জন্য।

মানবদেহের সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তুর অপচয় করলে আধ্যাত্মিক জীবন অ‌র্জিত হয় না। সাধকরা মিলনের চরম মুহূর্তেও ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে আত্মশক্তি অর্জন করে র‌তিশ‌ক্তি‌কে ঊর্ধ্বগামী করতে পারেন। কুম্ভক যোগ সাধ‌নের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে তারা সাধনা চা‌লিয়ে যান। রতিপাত রুদ্ধ করে তারা রতিক্ষয় রোধের প্রচেষ্টা করেন। দেহতত্ত্বে এই সাধনাকে প্রাণায়াম বলা হয়। প্রাণ মানে জীবন আর আয়াম মানে নিয়ন্ত্রণ। র‌তিশ‌ক্তি ঊর্ধ্বগামী করতে পারলে মন শান্ত ও ধীরস্থির হয়। প্রাণায়ামের মাধ্যমে সাধকরা ঊর্ধ্বরতি শান্তমতি লাভ করার চেষ্টা করেন। আর‌শি বা আয়নার মতো স্থির ও স্বচ্ছ পা‌নিতে যেমন প্রতিবিম্ব দেখা যায়, স্থির মনের আয়নাতেও তেমন নিজের রূপ দর্শন করা যায়। এভাবে ক‌ঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ সাধনায় সফলতা লাভ করতে পারলে ‘মউত কাবলান্তা মউত’ কিংবা মরার আগে মরার ভাব অর্জন হয়।

ফ‌কির লালন শাহ তার দেহতত্ত্বের একটি গানের বাণীতে বলেছেন,

“কী সন্ধানে আমি যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে,
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবারাতি নাই সেখানে।
যেতে পথে কাম নদীতে
পাড়ি দিতে তীর বিনে,
ধনীর ভাড়া যাচ্ছে মারা
পড়ে নদীর তোর তুফানে।
রসিক যারা চতুর তারা
তারাই নদীর ধারা চেনে,
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে
তারাই স্বরূপ সাধন জানে।
লালন বলে মলাম জ্বলে
মলাম আমি নিশি দিনে
মনের মানুষ স্থূলে রেখে
দেখাও স্বরূপ নীলাঞ্জনে।”

আরেক‌টি গানে ফ‌কির লালন বলেছেন,

“ও যার আপন খবর আপনার হয়না
একবার আপনারে চিনতে পারলেরে
যাবে অচেনারে চেনা।
ও সাঁই নিকট থেকে দূরে দেখায়
যেমন কেঁশের আড়ে পাহাড় লুকায় দেখ না
আমি ঘুরে এলাম সারা জগৎ রে
তবু মনের গোল তো যায় না।
আত্মরূপে কর্তা হরি মনে নিষ্ঠা হলে
মিলবে তার ঠিকানা
ও তুই বেদ-বেদান্ত পড়বি যত রে
ও তোর বাড়বে তত লগ্না।
আমি আমি কে বলে মন
যে জানে তার চরণ শরণ লও না
ফকির লালন বলে মনের ঘোরে রে
হলাম চোখ থাকিতে কানা।
ওসে অমৃত সাগরের সুধা
সুধা খাইলে জীবের ক্ষুধা তৃষ্ণা রয় না
ফকির লালন মরল জল পিপাসায় রে
কাছে থাকতে নদী মেঘনা।”

লেখক : তানভীর খালেক, নিউজ এডিটর, প্রথম কাগজ

সম্পর্কিত সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

spot_img