সুন্নু হাওলাদার। বয়স ৪০ বছর। পেশায় পল্লি সঞ্চয় ব্যাংকে চাকরি করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাদের সংসার। রোববার (ঈদুল আজহা) দুপুরের আগেই তাদের কুরবানি দেওয়া শেষ। বিকালে তার তিন ছেলে ও ভ্রমণবিলাসী স্ত্রী খুশবু আক্তারকে নিয়ে নদীর পাড় ঘুরেন।
তাদের বসবাস রায়পুর পৌরশহরে। তাই প্রতিদিনের মতো ঈদের দিন বিকালে পরিবার নিয়ে শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এসে মেঘনা নদীর পাড় উপভোগ করতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে। শুধু তিনিই না তার মতো হাজারো পরিবার নদীর পাড় (আলতাফ মাস্টারের মাছ ঘাট) ঘুরতে আসেন।
সুন্নু হাওলাদার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস ও ২২ হাজার ১৯০ ভোটার। গত ৩০ বছরেও শিশু পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। এবারের বাজেটেও কোনো বিনোদন কেন্দ্র রাখেননি মেয়র।

তিনি আরও বলেন, প্রতি শনিবার রায়পুর শহরের বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তাই ক্লান্তি, অলস সময় ও নাগরিক কর্মব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে অনেকেই প্রশান্তির ছোঁয়া খোঁজেন। তাই বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরকারি কর্মকর্তারা ও শনিবার ব্যবসায়ীরা তাদের পরিবার নিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে গ্রামীণ পরিবেশ মেঘনার পাড়ে মনোরম দৃশ্যমাখা আলতাফ মাষ্টার ঘাট এলাকায় (মিনি কক্সবাজার) ও কৃষি অঞ্চল হায়দরগঞ্জের সাজু মোল্লারঘাটে ঘুরে আসেন।
মেঘনার পাড়ে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা থাকে প্রায় সময়। আর হাতের কাছে এমন সুন্দর, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে রাজধানীসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মিনি কক্সবাজার নদীর কোলঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নিরিবিলি স্থান। নদীর কল কল ধ্বনি কানে আসলে কি যে অপরূপ ভালো লাগা তা না গেলে বোঝা যাবে না।

এখানে শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল দুই মৌসুমেই এলাকার পরিবেশ ভালো থাকে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্যবিহীন প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশে আপনি বনভোজনের স্থান হিসেবেও নির্বাচন করা হয়ে থাকে।
আলতাফ মাষ্টারের মাছঘাটে রায়পুরে মেঘনা নদীর পাড়ের ব্লকগুলোতে বসে আপন মনে ভাবতে পারেন প্রিয়জনের কথা, দেখতে পারেন সূর্যাস্তের মত অপরূপ দৃশ্য, পাশে বিশাল আকৃতির খোলা জায়গা। মুসলমান ও হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
নদীতে ভ্রমণ করার মতো নৌকার ব্যবস্থা সব সময় না থাকলেও ওখানে থাকা নৌকার মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে তা ব্যবস্থা করা সম্ভব। থাকার মতো আবাসিক হোটেল হয়তো নেই এখানে কিন্তু টিম নিয়ে আসলে খোলা আকাশের নিচে তাঁবু দিয়ে থাকার জায়গার অভাব হবে না।

বনভোজনের জন্য সুন্দর স্থান এটি, একসঙ্গে কয়েক হাজার লোক এখানে ভ্রমণ করতে পারবে। এখানে আশেপাশে ভালো মানের ৩-৪টি খাওয়ার হোটেল ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে।
আলতাফ মাস্টারের মাছঘাট ও মিনি কক্সবাজার যেভাবে যাবেন: নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী সিএনজি করে রায়পুর হয়ে হায়দারগঞ্জে, পাটোয়ারি রাস্তারমাথা, বাসাবাড়ি বাজার নামতে হবে। এখান থেকে আঞ্চলিক সড়কে চরইন্দুরিয়া মেঘনাবাজার এলাকায় দিয়ে সোজা গাড়ি চালিয়ে নতুন সলিং সড়কে দিয়েও ওই স্থানে যাওয়া যায়।
সরকারি অথবা বেসরকারি সঠিক উদ্যোগে মিনি কক্সবাজার হয়ে যেতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলে সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো রিসোর্ট নেই তাই আলতাফ মাস্টার ও হায়দরগঞ্জ সাজু মোল্লার মাছ ঘাট মেঘনার অববাহিকাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দিলে এ অঞ্চলের উপকূলের বঞ্চিত মানুষগুলো কিছু সুবিধা পাবে।

প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে চাইলে রায়পুরের আলতাফ মাস্টারের নতুন মাছঘাট ও সাজু মোল্লার মাছঘাটে চলে আসতে পারেন। ঘাটস্থ মেঘনার পাড় যেকোনো বিশেষ দিনে এই দুই স্থানে ব্যাপক মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেড়াতে আসে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। চরইন্দুরিয়া সংলগ্ন মেঘনার পাড় এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সম্ভাবনার কথা বলে।
উপকূলীয় অঞ্চলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে হয়ে যেতে পারে নিদারুণ রিসোর্ট। উপকূলের প্রাকৃতিক নিদর্শন রিসোর্টে রূপদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মেঘনার পাড়ের অবহেলিত লোকজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে।